Friday, September 7, 2012

৭১ ইতিহাসে মিরাশের মার দু:সাহসী ভূমিকা

৭১ ইতিহাসে এই নেত্রকোণা জেলার স্থান সুপরিচিত। রয়েছে হাজারও বেদনাময় স্মৃতিতে ঘেরা। গারো পাহাড়ের পাদদেশে হাওর বাওর খাল-বিল, নদী-নালা, বন-জঙ্গলের অপরূপ প্রাকৃতিক শোভায় দন্ডায়মান নেত্রকোনা। এই জেলা পরিচিত মূলত- নলীনী রঞ্জন সরকার, হাফিজুর রহমান, কমরেড মনি সিংহ, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ, রবীন্দ্র সংগীতের প্রবাদ পুরুষ
শৈলজা রঞ্জন মজুমদার, মৈমনসিংহ গীতিকার সংগ্রাহক চন্দ্র কুমার দে-মৈমনসিংহ গীতিকার অধিকাংশ পালাই নেত্রকোণা থেকে সংগৃহীত, মনসুর বয়াতী, দ্বিজ কানাই, লোচন কর্মকার, বিজয় আচার্য্য, বাউল উকিল মুন্সী, রশিদ উদ্দিন, জালাল খাঁ, মিরাজ উদ্দিন, শহীদ বুদ্ধিজীবী আরজ আলী, প্রফেসর ফজলুর রহমান খান, কর্ণেল আবু তাহের বীরোত্তম, কবি নির্মলেন্দু গুণ, কবি হেলাল হাফিজ, কবি মাহবুব তালুকদার, ঔপন্যাসিক নাট্যকার হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবাল প্রমুখ
আর তাদের সাথেই আছেন সাহসে অদম্য এক নারী মুক্তিযোদ্ধা মিরাশের মা। মিরাশী বেগম স্বশিক্ষিত গ্রাম্য গৃহবধুমুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ত্রিশোর্ধ তখন চার সন্তানের জননী পিতা-চাথু মিয়া, গ্রাম: মদন, থানা-মদন, মহকুমা (বর্তমান জেলা) নেত্রকোণা মিরাশী বেগম মুক্তিযুদ্ধের সময় মদন থানাসহ মুক্তিযোদ্ধাদের রাঁধুনীর কাজ করতেনমুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাক হানাদারদের বর্বরতার কথা শুনে তার হানাদাদের প্রতি ঘৃণা জন্মেছিলমুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে থাকতে থাকতে অস্ত্রচালানা রপ্ত করেছিলেন তিনিভাদ্র মাসের ১৩ তারিখ থেকে মিরাশী বেগম সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেনমিরাশী বেগম সম্মুখ যুদ্ধের চেয়ে যুদ্ধচলাকালীন মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার সরবরাহ করতেন বেশি১ নভেম্বর থেকে ১শ ৭২ ঘন্টা মদন যুদ্ধের সময় মিরাশী বেগমের দু:সাহসী ভূমিকা পালন করে ছিলেনযুদ্ধচলার সময় গোলাবরুদ উপেক্ষা করে যুদ্ধরত প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার কাছে মিরাশী বেগম খাদ্য সরবরাহ করে ছিলেনসে দিনের যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধা এম. এ গণি আকন্দ তার গ্রন্থ মুক্তিযুদ্ধ আমার প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তি-তে উল্লেখ করেছেন- এক গাঁয়ের বধুজীবনের মায়া, লাজ লজ্জা ত্যাগ করে, এখানে এলো আমার জন্য খাবার নিয়েপ্রতিদান কী কোনো দিন দিতে পারবো আমরা ? এ মেয়ে কী সাধারণ মেয়ে ? পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার যুদ্ধেক্ষেত্রের সাথী আলেয়ার চেয়ে এই মিরাসের মার সাহস, বুদ্ধিমত্তা, মানবিকতা, দেশপ্রেম কোন অংশে কম কীসে? হয়তো এভাবেই যুগে ফিরে আসে আলেয়ারা- তাদের কর্তব্য পালন করতেকখনও আলেয়া, কখনও ইলামিত্র, কখনও হয়তো মিরাসের মা
কিন্তু সেদিনের সেই মীরাশের মা? যুদ্ধ খেয়েছে তার স্বামী সন্তানকেশেষে ভিটেটাও বিক্রি করে হয়েছে নিঃস্ব, মরমী ফকির, আসে নেত্রকোণা মাঝে মধ্যেবেঁচে আছে হয়তো কারো দয়া দাক্ষিণ্যে

নেত্রকোণার আলো ডট কম
সূত্র : নেত্রকোণা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আলী আহাম্মদ খান আইয়োব

No comments:

Post a Comment