সুষ্ঠু সুন্দর জীবনযাপনে জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই । শ্রম, মেধা ও চেষ্টার মাধ্যমে মানুষকে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। জ্ঞান অর্জনের ল্য থাকে শিক্ষার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা । এ জন্য মানুষকে নিজস্ব মূল্যবোধের ভেতর দিয়ে চর্চার মাধ্যমে ক্রমাগত এগিয়ে যেতে
হয়। এ রকমই একজন গভীর জ্ঞানের সব্যসাচী মানুষ অধ্যাপক যতীন সরকার। ঠাকুরদা রামদয়ালের কাছেই তাঁর প্রথম জ্ঞানের বুলি বোঝানোর কাজটি
শুরু হয় । তিনি তাকে রামায়ণ, মহাভারত, রামকৃষ্ণ কথামৃত, স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী ইত্যাদি পড়ে শুনাতেন। বাংলার পাশাপাশি সংস্কৃত
পাঠেরও শুরু পারিবারিক পরিমন্ডলই। অধ্যাপক যতীন সরকারের পিতা একজন হোমিও ডাক্তার ছিলেন। এ ডাক্তারি পেশাই ছিল তার আয়ের একমাত্র উৎস। তাঁদের চন্দ্রপাড়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী দলপা ও নন্দীগ্রাম ছিল হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠার পরপরই ওই এলাকার লোকজন ব্যাপক হারে চলে যায় ভারতে। এতে তার পিতার ডাক্তারি পেশার উপর চাপ তৈরি হয়। যতীন সরকারের পরিবার ভয়ানক আর্থিক দৈন্যে পড়ে যায় । এর প্রভাব পড়ে যতীন সরকারের উপর। ফলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় রামপুর বাজারে ছাটাই বিছিয়ে তাঁকে দোকান খুলে বসতে হয়। নিত্য প্রয়োজনীয় খুচরা জিনিস বিক্রি করে তাকে প্রতিদিনের খরচের যোগান দিতে হত। ১৯৫৪ সালে আশুজিয়া হাইস্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশের পর আইএ ভর্তির টাকা সংগ্রহের জন্য তাকে এক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। টিউশনি করে তিনি সে টাকা উপার্জন করেছিলেন এবং শহরে লজিং থেকে লেখাপড়া চালিয়ে ছিলেন। ১৯৫৯ সালে বিএ পরীক্ষার শেষ হবার পরই বারহাট্টা থানা সদরে হাইস্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু সরকার ওই স্কুলের অনুমোদন কেটে দেওয়ায় সেখানেও জীবিকার ব্যাপারে তাঁর সংগাম অব্যাহত থাকে। তিনি দু’বছর শিক্ষকতা করে টাকা জমিয়ে ১৯৬১ সালে বাংলায় এমএ ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সেখান থেকে ১৯৬৩ সালে এমএ পাশ করেন। ড:এনামুল হক, মোস্তফা নূরউল ইসলাম তাঁর সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। ১৯৬৩ সালেই বাংলার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন গৌরিপুর হাইস্কুলে। ১৯৬৪ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। তিনি আজ খ্যাতির শীর্ষে আসীন। ওই শীর্ষস্থানটি দখল করতে গিয়ে তাকে বহু প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে। অধ্যাপক যতীন সরকার গভীর জ্ঞানের স্বিকৃতি হিসেবে ১৯৬৭ সালে “পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা উপন্যাসের ধারা ”প্রবন্ধের জন্যে বাংলা একাডেমী থেকে ডক্টর এনামুল হক স্বর্ণপদক থেকে খালেকদাদ চৌধুরীর সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৭), মনিরদ্দীন ইউনুফ স্মৃতি পদক(১৯৯৭), ময়মনসিংহ প্রেসকাব সাহিত্য পদক (২০০১), শ্র“তি স্বর্ণপদক নারায়নগঞ্জ (২০০৪), ‘পাকিস্তানের জন্ম- মৃত্যু দর্শন’ গ্রন্থের জন্য মননশীল শাখায় দৈনিক প্রথম আলোর বর্ষসেরা বই পুরস্কার (২০০৫), বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (২০০৭), ক্রাস্তি শিল্পীগোষ্ঠীর ক্রান্তি পদক (২০০৮), সাংস্কৃতিক সংগঠন আমরা ‘সূর্যমূখী’র সম্মাননা (২০০৮), ছড়াকার আলতাব আলী হাসু পুরস্কার (২০০৯), শিক্ষায় স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১০), রবীন্দ্র সম্মীলন সম্মাননা(২০১২), এত খ্যাতি অর্জনের পরও শিক্ষকতা পেশা থেকে ২০০২ সালে অবসর নিয়ে অদ্যবধি তিনি মফস্বল শহর নেত্রকোণায় বসবাস করছেন। এর মধ্যদিয়ে তিনি আমাদের সময়ের একজন অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তি হিসেবে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন। মানবিকতার বোধ তার চিন্তার কেন্দ্রমূলে ধৃত। একটি বোধ একদিনে তৈরী হয় না। জীবনের পলে পলে তার আচরণে, কল্পনায় ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, সাহসে-সংকোচে সে তৈরী হয়। বক্তব্যের জাদুকর অধ্যাপক যতীন সরকার পুরো বাংলাদেশকে বুকের মধ্যে ধারণ করেন অসম্ভব মমতায়। দুর্বলতা ভীরুতার মধ্যে জীবনের বিকাশ অসম্ভব। সুন্দর ও কল্যাণময় জীবনের জন্য অশুভের ধ্বংস জরুরী। এ জন্যে তিনি লিখে যাচ্ছেন প্রবন্ধের পর প্রবন্ধ। যে প্রবন্ধে লেখা আছে মানুষের কথা, সমাজতন্ত্রের কথা, অসম্প্রদায়িক চেতনার কথা। জীবনের শঙ্কা থাকতে পারে, হতাশা আসতে পারে। তবু জীবন ব্যর্থ নয়, যদি জীবনে থাকে সাহসিকতা এবং সৃজনশীলতা।
পাঠেরও শুরু পারিবারিক পরিমন্ডলই। অধ্যাপক যতীন সরকারের পিতা একজন হোমিও ডাক্তার ছিলেন। এ ডাক্তারি পেশাই ছিল তার আয়ের একমাত্র উৎস। তাঁদের চন্দ্রপাড়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী দলপা ও নন্দীগ্রাম ছিল হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠার পরপরই ওই এলাকার লোকজন ব্যাপক হারে চলে যায় ভারতে। এতে তার পিতার ডাক্তারি পেশার উপর চাপ তৈরি হয়। যতীন সরকারের পরিবার ভয়ানক আর্থিক দৈন্যে পড়ে যায় । এর প্রভাব পড়ে যতীন সরকারের উপর। ফলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় রামপুর বাজারে ছাটাই বিছিয়ে তাঁকে দোকান খুলে বসতে হয়। নিত্য প্রয়োজনীয় খুচরা জিনিস বিক্রি করে তাকে প্রতিদিনের খরচের যোগান দিতে হত। ১৯৫৪ সালে আশুজিয়া হাইস্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশের পর আইএ ভর্তির টাকা সংগ্রহের জন্য তাকে এক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল। টিউশনি করে তিনি সে টাকা উপার্জন করেছিলেন এবং শহরে লজিং থেকে লেখাপড়া চালিয়ে ছিলেন। ১৯৫৯ সালে বিএ পরীক্ষার শেষ হবার পরই বারহাট্টা থানা সদরে হাইস্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু সরকার ওই স্কুলের অনুমোদন কেটে দেওয়ায় সেখানেও জীবিকার ব্যাপারে তাঁর সংগাম অব্যাহত থাকে। তিনি দু’বছর শিক্ষকতা করে টাকা জমিয়ে ১৯৬১ সালে বাংলায় এমএ ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সেখান থেকে ১৯৬৩ সালে এমএ পাশ করেন। ড:এনামুল হক, মোস্তফা নূরউল ইসলাম তাঁর সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। ১৯৬৩ সালেই বাংলার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন গৌরিপুর হাইস্কুলে। ১৯৬৪ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। তিনি আজ খ্যাতির শীর্ষে আসীন। ওই শীর্ষস্থানটি দখল করতে গিয়ে তাকে বহু প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে। অধ্যাপক যতীন সরকার গভীর জ্ঞানের স্বিকৃতি হিসেবে ১৯৬৭ সালে “পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা উপন্যাসের ধারা ”প্রবন্ধের জন্যে বাংলা একাডেমী থেকে ডক্টর এনামুল হক স্বর্ণপদক থেকে খালেকদাদ চৌধুরীর সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৭), মনিরদ্দীন ইউনুফ স্মৃতি পদক(১৯৯৭), ময়মনসিংহ প্রেসকাব সাহিত্য পদক (২০০১), শ্র“তি স্বর্ণপদক নারায়নগঞ্জ (২০০৪), ‘পাকিস্তানের জন্ম- মৃত্যু দর্শন’ গ্রন্থের জন্য মননশীল শাখায় দৈনিক প্রথম আলোর বর্ষসেরা বই পুরস্কার (২০০৫), বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (২০০৭), ক্রাস্তি শিল্পীগোষ্ঠীর ক্রান্তি পদক (২০০৮), সাংস্কৃতিক সংগঠন আমরা ‘সূর্যমূখী’র সম্মাননা (২০০৮), ছড়াকার আলতাব আলী হাসু পুরস্কার (২০০৯), শিক্ষায় স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১০), রবীন্দ্র সম্মীলন সম্মাননা(২০১২), এত খ্যাতি অর্জনের পরও শিক্ষকতা পেশা থেকে ২০০২ সালে অবসর নিয়ে অদ্যবধি তিনি মফস্বল শহর নেত্রকোণায় বসবাস করছেন। এর মধ্যদিয়ে তিনি আমাদের সময়ের একজন অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তি হিসেবে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন। মানবিকতার বোধ তার চিন্তার কেন্দ্রমূলে ধৃত। একটি বোধ একদিনে তৈরী হয় না। জীবনের পলে পলে তার আচরণে, কল্পনায় ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, সাহসে-সংকোচে সে তৈরী হয়। বক্তব্যের জাদুকর অধ্যাপক যতীন সরকার পুরো বাংলাদেশকে বুকের মধ্যে ধারণ করেন অসম্ভব মমতায়। দুর্বলতা ভীরুতার মধ্যে জীবনের বিকাশ অসম্ভব। সুন্দর ও কল্যাণময় জীবনের জন্য অশুভের ধ্বংস জরুরী। এ জন্যে তিনি লিখে যাচ্ছেন প্রবন্ধের পর প্রবন্ধ। যে প্রবন্ধে লেখা আছে মানুষের কথা, সমাজতন্ত্রের কথা, অসম্প্রদায়িক চেতনার কথা। জীবনের শঙ্কা থাকতে পারে, হতাশা আসতে পারে। তবু জীবন ব্যর্থ নয়, যদি জীবনে থাকে সাহসিকতা এবং সৃজনশীলতা।
অধ্যাপক যতীন সরকার সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেন। ওই লৌকিক বাংলায় একদিন না একদিন সমাজতন্ত্র কায়েম হবে, এটা বিশ্বাস করেন মনে-প্রাণে, ধ্যানে-মননে। অধ্যাপক যতীন সরকার বলে যে ব্যক্তিত্বকে আজ আমরা স্মরণ করছি
তাকে খুঁজে খুঁজে বুঝতে হয় না, তার অবস্থান খুবই স্পষ্ট। এই স্পষ্টতা নিয়েই তিনি সৎ এবং বিবেকবান। তিনি একজন মুক্তবুদ্ধি সম্পন্ন বিদগ্ধ সমালোচক ও নিষ্ঠাবান তথ্যান্বেষী। তথ্য ও তথ্যের সমন্বিত উপস্থাপনায় তাঁর পান্ডিত্য প্রখর। বোঝা যায়,
তাঁর জীবন নানা কর্মকান্ডের ভেতর দিয়ে একটা
অর্থ নিয়ত দর্শনে এগিয়ে চলেছে। তা হলো, মানুষের মধ্যে নানাভাবে যে মনন-প্রতিবন্ধিত্ব বিদ্যমান, তা যথাসম্ভব সরিয়ে দেওয়া, সকল অযুক্তি ও কুযুক্তিকে দ্বিধাহীনভাবে ত্যাগ করে সহজ পথে ফিরে আসা। এই কাজটি তিনি করেন শরীর, মন ও সত্তার সর্বাংশ
দিয়ে, বিচার ও বুদ্ধির সবটুকু সীমানা প্রাচীর তৈরী করে। এজন্যে যতীন সরকারের কথা শুনে বিবেক সম্পন্ন শিতি মানুষ সহজেই প্রভাবিত হয়। যতিন সকারের ‘‘পাকিস্তানের জন্মমৃত্যু-দর্শন” বইটিতে দেশজ পরিসরের রাজনীতি ও লোকজ-মানুষের চলচ্ছবি এক বেনীতে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে
যুক্ত হয়েছে। এবার তিনি লিখছেন ‘‘পাকিস্তানের ভূত দর্শন”। বইটি ডিসেম্বরে পাঠকের কাছে আসার কথা। ২৬ জুন ২০১২ নেত্রকোণা সার্কিট হাউজ মিলনায়তন প্রাঙ্গনে বাংলা একাডেমী কর্তৃক ‘চন্দ্রকুমার দে’র’ ওপর আয়োজিত সভায় যতীন সরকার যখান বলেন
: - ‘পীড়িত যতন পীড়িত রতন পীড়িত গলার হার.............” তখন সহজেই অনুভব করা যায় তিনি প্রেমকে খুঁজে পেয়েছেন সাধারণ
মানুষের সুখ-দুঃখ,
বিরহমিলন পরিপূর্ণ জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি, খুঁজে পেয়েছেন তাদের জীবন যাত্রার ইতিবাচক দিক। এ সবের বিশ্লেষণে যতীন সকারের যে পরিচয় রয়ে গেছে তা আমাদের মুগ্ধ করে। তিনি আশাবাদী মানুষ এবং বিপদে কখনো ভেঙ্গে পড়েন না। শ্রমজীবীর লোকায়ত শিকড়ে তিনি আশ্রয় খুঁজেন। তাঁর স্বত:স্ফূর্ত উচ্চহাসি সবাইকে মুগ্ধ করে। সাহিত্য, গবেষণা এবং সমাজ ভাবনা তাঁর এত কিছুর প্রকাশ।
লিখছেন : আবুল কাইয়ূম আহম্মদ
মোবাইল : ০১৭১৬-৩৪৯৭২৪
No comments:
Post a Comment