Saturday, December 8, 2012

নেত্রকোণা ট্র্যাজিডি দিবস আজ, আত্মঘাতী বোমা হামলার ৭ বছর

সোহান আহম্মদ কাকন, স্টাফ রিপোর্টার (নেত্রকোণা) :  ২০০৫ সালের আট ডিসেম্বর নেত্রকোণার উদীচী এবং শতদল গোষ্ঠীর সামনে পরপর দুটি বোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছিল শহরের সংস্কৃতি কর্মীসহ আটজনআহত হয়েছিল অর্ধশতাধিকস্তব্ধ হয়ে পড়েছিল নেত্রকোনার বাতাসস্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে পড়েছিল নেত্রকোণার আকাশএরপরও অনেকেই আজো গলায় এবং বুকে বোমার  স্পিন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন
সেদিনও ছিল বৃহস্পতিবারএর পরদিন শুক্রবার ৯ ডিসেম্বরের প্রস্তুতি সভা চলাকালে সকাল ৯ টায় প্রথম বোমাটি রাখার পর বর্তমান উদীচীর সভাপতি সানাওয়ার হোসেন ভুইয়ার বাসায় টেলিফোন থেকে একটি ফোনে জানানো হয় উদীচীর সামনে ড্যানো দুধের কৌটায় বোমা রাখা আছেএই খবরের সাথে সাথে নেত্রকোনা থানার পুলিশ এবং ফায়ার সাভির্সের কর্মকর্তাসহ সকলেই গিয়ে বোমাটিকে পানি ঢালতে ঢালতে পার্শবর্তী পুকুরে ফেলে দেয়ার সময় খুটির সজোরে আঘাতে বোমাটি ফুটে গেলে একজন পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকতা আহত হনআতংকিত হয়ে পড়েন সারা শহরের মানুষসুক জনতায় ভীড় করে ঘটনস্থলভীড়ের  ঠিক কিছুনের মধ্যেই শহরের মালনী রোডের দিক (পূর্ব পাশ) থেকে দ্রুতগতিতে আসা এক আত্মঘাতী সাইকেল আরোহী প্রবেশ করতেই নিমিষে যেন স্তব্ধ হয়ে গেল গোটা নেত্রকোনাবিকট এক শব্দে নিঃশব্দ পুরো শহরমাটিতে লুটিয়ে পড়েন উদীচীর সহ সাধারন সম্পাদক খাজা হায়দার হোসেন, সংগঠক সুদীপ্তা পাল শেলী, মোটর মেকানিক যাদব দাস, ভিক্ষুক জয়নাল, মাছ ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন, রইছ মিয়া, গৃহিনী রানী আক্তার ও আত্মঘাতী অজ্ঞাত সাইকেল আরোহীসহ আরো কতজনচিরতরে স্তব্ধ হয়ে যায় এরা আট জনের জীবনী শক্তি
সেদিন নেত্রকানাবাসী হয়ে পড়েছিল নির্বাক নিঃশব্ধআজ বছর ঘুরে আবার ফিরে এলো দিনটিকিন্তু ফিরে আসবে না হায়দার, শেলী, যাদবেরাদীর্ঘ ৬ বছর পার হলোবোমাবাজ বাংলা ভাইয়ের ফাঁসি হলোকিন্তু নেত্রকোণার কোথায় কার বাসায় এরা আত্মঘাতী বোমা বিষ্ফোরনের প্রস্তুতি নিয়েছিলো তা আজো কেউ বের করতে পারলোনাআজো শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে নাপ্রতি বছর দিনটি পালিত হয় ঠিকই কিন্তু ঘরে ফিরে আসে না ভিুক জয়নাল, মাছ ব্যবসায়ী আফতাব মাছের ঢালী সাজিয়ে বসে কাউকে আর ডাকেনা মাছ নিয়ে যাননিহতদের পরিবারগুলো আর কত অপোয় থাকবে ? এ প্রশ্নের জবাবে কারো কোন সদোত্তর মিলে নাসবাই নির্বাক হয়ে দেখে দেখে ফিরে যায়যেন ভাষা নেই কিছু বলারএই নিহতদের পবিবার গুলোর কারোর কাছে কিছুই চাওয়ার নেইকারন সব চাওয়াই আজ ব্যার্থনিহত হায়দারের স্ত্রী বলেন, বর্তমান কৃষি মন্ত্রী সেদিন এসে আমাদের দেখে দিয়েছিলেন অনেক প্রতিশ্রুতিকিন্তু আর কতদিন বুকে ধরে রাখবে সেই প্রতিশ্রুতির কথা ? দুটি সন্তান নিয়ে বিধবার হয়েছেজ্বালাএকটি বেসরকারী এনজিও নারী প্রগতি এগিয়ে আসলেও এদেশের সরকার কতটুকু এগিয়ে এসেছে এই স্বজনহারাদের কাছে এটাই খুজে বেড়ান দু সন্তানের জননী হায়দারের রেখে যাওয়া অতন্ত্র প্রহরীএদিকে শেলীর মায়ের একমাত্র উপার্জনোম মেয়ে হারিয়ে কোনরকমে দিনানিপাত করছে বৃদ্ধ দুই সংগীএতো কিছুর পরও নেত্রকোণায় কার আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে সেদিক এ নরকীয় ঘটনা ঘটেছিল তা আজো কেন কেউ বের করতে পারেনি এ প্রশ্ন সবারপ্রতি বছরের এ দিনে  নানান কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে নেত্রকোণাবাসী নিহতদের স্মরণ করেএবারও সকাল ১০টায় উদীচী কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ ও স্মৃতিসৌধে পুষ্প স্তবক অর্পণ, ১০টা ৪০ মিনিটে স্তব্ধ নেত্রকোণা’(রাস্তায় দাঁড়িয়ে পাঁচ মিনিট নিরবতা পালন), ১১টায় প্রতিবাদী মিছিল, বিকাল ৪টায় শহীদ মিনারে সন্ত্রাস, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্টিত হবে

পোষ্ট : বাংলাদেশ সময় শনিবারে  ১১ : ৩৫  মিনিট এ এম / ০৭ ডিসেম্বর ১২  
  



No comments:

Post a Comment