সেদিনও ছিল বৃহস্পতিবার। এর পরদিন শুক্রবার
৯ ডিসেম্বরের প্রস্তুতি সভা চলাকালে সকাল ৯ টায় প্রথম বোমাটি রাখার পর বর্তমান উদীচীর
সভাপতি সানাওয়ার হোসেন ভুইয়ার বাসায় টেলিফোন থেকে একটি ফোনে জানানো হয় উদীচীর সামনে
ড্যানো দুধের কৌটায় বোমা রাখা আছে। এই খবরের সাথে সাথে
নেত্রকোনা থানার পুলিশ এবং ফায়ার সাভির্সের কর্মকর্তাসহ সকলেই গিয়ে বোমাটিকে পানি ঢালতে
ঢালতে পার্শবর্তী পুকুরে ফেলে দেয়ার সময় খুটির সজোরে আঘাতে বোমাটি ফুটে গেলে একজন পুলিশ
ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকতা আহত হন। আতংকিত হয়ে পড়েন সারা
শহরের মানুষ। উৎসুক জনতায় ভীড় করে ঘটনস্থল। ভীড়ের ঠিক কিছুনের মধ্যেই শহরের মালনী
রোডের দিক (পূর্ব পাশ) থেকে দ্রুতগতিতে আসা এক আত্মঘাতী সাইকেল আরোহী প্রবেশ করতেই
নিমিষে যেন স্তব্ধ হয়ে গেল গোটা নেত্রকোনা। বিকট এক শব্দে নিঃশব্দ
পুরো শহর। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন উদীচীর সহ সাধারন সম্পাদক খাজা হায়দার হোসেন, সংগঠক সুদীপ্তা পাল শেলী, মোটর মেকানিক যাদব দাস, ভিক্ষুক জয়নাল, মাছ ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন, রইছ মিয়া,
গৃহিনী রানী আক্তার ও আত্মঘাতী অজ্ঞাত সাইকেল
আরোহীসহ আরো কতজন। চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যায় এরা আট জনের জীবনী শক্তি।
সেদিন নেত্রকানাবাসী হয়ে পড়েছিল নির্বাক নিঃশব্ধ। আজ বছর ঘুরে আবার ফিরে এলো দিনটি। কিন্তু ফিরে আসবে না
হায়দার, শেলী, যাদবেরা। দীর্ঘ ৬ বছর পার হলো। বোমাবাজ বাংলা ভাইয়ের ফাঁসি হলো। কিন্তু নেত্রকোণার কোথায় কার বাসায় এরা আত্মঘাতী বোমা বিষ্ফোরনের প্রস্তুতি নিয়েছিলো
তা আজো কেউ বের করতে পারলোনা। আজো শহীদদের আত্মা
শান্তি পাবে না। প্রতি বছর দিনটি পালিত হয় ঠিকই কিন্তু ঘরে ফিরে আসে না ভিুক
জয়নাল, মাছ ব্যবসায়ী আফতাব মাছের ঢালী সাজিয়ে বসে কাউকে আর ডাকেনা মাছ
নিয়ে যান। নিহতদের পরিবারগুলো আর কত অপোয় থাকবে ? এ প্রশ্নের জবাবে কারো কোন সদোত্তর মিলে না। সবাই নির্বাক হয়ে দেখে দেখে ফিরে যায়। যেন ভাষা নেই কিছু
বলার। এই নিহতদের পবিবার গুলোর কারোর কাছে কিছুই চাওয়ার নেই। কারন সব চাওয়াই আজ ব্যার্থ। নিহত হায়দারের স্ত্রী
বলেন, বর্তমান কৃষি মন্ত্রী সেদিন এসে আমাদের দেখে দিয়েছিলেন অনেক
প্রতিশ্রুতি। কিন্তু আর কতদিন বুকে ধরে রাখবে সেই প্রতিশ্রুতির কথা ? দুটি সন্তান নিয়ে বিধবার হয়েছে। জ্বালা। একটি বেসরকারী এনজিও নারী প্রগতি এগিয়ে আসলেও এদেশের সরকার কতটুকু
এগিয়ে এসেছে এই স্বজনহারাদের কাছে এটাই খুজে বেড়ান দু সন্তানের জননী হায়দারের রেখে
যাওয়া অতন্ত্র প্রহরী। এদিকে শেলীর মায়ের একমাত্র উপার্জনোম মেয়ে হারিয়ে কোনরকমে দিনানিপাত
করছে বৃদ্ধ দুই সংগী। এতো কিছুর পরও নেত্রকোণায় কার আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে সেদিক এ নরকীয়
ঘটনা ঘটেছিল তা আজো কেন কেউ বের করতে পারেনি এ প্রশ্ন সবার। প্রতি বছরের এ দিনে নানান কর্মসূচীর মধ্য
দিয়ে নেত্রকোণাবাসী নিহতদের স্মরণ করে। এবারও সকাল ১০টায় উদীচী
কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ ও স্মৃতিসৌধে পুষ্প স্তবক অর্পণ, ১০টা ৪০ মিনিটে ‘স্তব্ধ নেত্রকোণা’(রাস্তায় দাঁড়িয়ে পাঁচ
মিনিট নিরবতা পালন), ১১টায় প্রতিবাদী মিছিল, বিকাল ৪টায় শহীদ মিনারে সন্ত্রাস, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্টিত হবে।
পোষ্ট : বাংলাদেশ সময় শনিবারে ১১ : ৩৫ মিনিট এ এম / ০৭ ডিসেম্বর ১২।
No comments:
Post a Comment